Header Ads Widget

header ads

Ticker

6/recent/ticker-posts

দ্বাদশ শ্রেণি- এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি

দ্বাদশ শ্রেণি (Class Twelve)

বিষয়- রাষ্ট্রবিজ্ঞান (Pol Science)

অধ্যায়- সরকারের বিভিন্ন বিভাগ

প্রশ্ন- এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও। [4+4] 


উত্তর- গঠনগত দিক থেকে আইনসভাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- 1) এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা এবং 2) দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা। নামগুলি শুনেই বোঝা যাচ্ছে যে, এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় একটিমাত্র কক্ষ থাকে; অপরপক্ষে, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার দুটি কক্ষ থাকে। আইনসভা এককক্ষবিশিষ্ট হলে সেখানে জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই থাকেন। আর, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় সাধারণত নিম্নকক্ষটি জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয় এবং উচ্চকক্ষের সদস্যগণ জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন না। যেমন, ভারতের ক্ষেত্রে লোকসভা হল নিম্নকক্ষ এবং রাজ্যসভা হল উচ্চকক্ষ। লোকসভার প্রতিনিধিগণ জনগনের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন কিন্তু রাজ্যসভার সদস্যগণ জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন না।

এককক্ষবিশিষ্ট বনাম দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা

আইনসভা এককক্ষবিশিষ্ট হবে নাকি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হবে, এই নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। বেন্থাম, ল্যাস্কি, আবে সিয়ে প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সমর্থক। অপরপক্ষে লর্ড ব্রাইস, জন স্টুয়ার্ট মিল, হেনরি মেইন, লর্ড অ্যাক্টন, গেটেল প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সমর্থক। যাইহোক, নীচে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তিগুলি তুলে ধরা হল।

এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তি

1) প্রকৃত গণতান্ত্রিক আইনসভা- আইনসভা যদি এককক্ষবিশিষ্ট হয় তাহলে সেখানে কেবলমাত্র জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা থাকবেন। এইজন্য অনেকেই মনে করেন যে, এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভাই হল প্রকৃত গণতান্ত্রিক আইনসভা।

2) অধিক দায়িত্বশীল- এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় একটিমাত্র কক্ষ থাকে বলে সমস্ত কাজকর্মের ভার সেই কক্ষের উপরেই এসে পড়ে এবং যেহেতু অন্য কাউকে দোষারোপ করার ব্যাপার থাকে না, তাই এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা তুলনামূলকভাবে বেশি দায়িত্ববান হয়।

3) দ্রুত সিদ্ধান্তগ্রহণ সম্ভব- এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় পদ্ধতিগত জটিলতা কম থাকে এবং সেইজন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।

4) ব্যয়ভার কম হয়- আইনসভার দুটি কক্ষ থাকলে সদস্যসংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই বেশি হবে এবং সদস্যদের বেতন, ভাতা ইত্যাদি বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। কিন্তু এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সদস্যসংখ্যা কম, তাই ব্যয়ভারও অনেক কম হয়।

5) স্বচ্ছ এবং প্রগতিশীল- এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার গঠন এবং কার্যপদ্ধতি সহজসরল হয় তাই আইন প্রণয়নের ব্যাপারে স্বচ্ছতা বজায় থাকে। একইসঙ্গে, এই ধরনের আইনসভা প্রগতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে মানানসই বলে অনেকে মত পোষণ করে থাকেন।

6) স্ববিরোধিতার আশঙ্কা থাকে না- দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার দুটি কক্ষের সদস্যদেরই প্রধান কাজ হল আইন প্রণয়ন করা। কিন্তু দুটি কক্ষে যদি দুটি ভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রাধান্য থাকে এবং দুই কক্ষের সদস্যগণ যদি পরস্পরের বিরোধিতায় লিপ্ত হন তবে আইন প্রণয়নের কাজে অচলাবস্থা দেখা দেবে। এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় কখনোই এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না।

এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিপক্ষে যুক্তি

1) স্বৈরাচারী হওয়ার আশঙ্কা থাকে- এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় একটিমাত্র কক্ষেই আইন প্রণয়নের কার্যাবলি সম্পন্ন হয়। সুতরাং সেই কক্ষের ভুল ধরার মতো বা সমালোচনা করার মতো কেউ থাকে না। এর ফলে উক্ত আইনসভার স্বৈরাচারী হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

2) যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অনুপযোগী- যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার সাফল্যের জন্য সরকারকে জাতীয় স্বার্থের পাশাপাশি আঞ্চলিক স্বার্থের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়। এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে জাতীয় স্বার্থ এবং আঞ্চলিক স্বার্থের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা সম্ভব হয়না।

3) সুচিন্তিত আইন প্রণয়ন সম্ভব নয়- এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা অনেক সময়ই প্রবল ভাবাবেগের দ্বারা চালিত হয়ে অথবা জনমতের চাপে আইন প্রণয়ন করে থাকে। আইনসভার দুটি কক্ষ থাকলে আইন প্রণয়নের পূর্বে দীর্ঘ আলাপ আলোচনার সুযোগ থাকে এবং তার ফলে সুচিন্তিত আইন প্রণীত হয়। কিন্তু এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় প্রায়শই সেই সুযোগ থাকে না।

4) যথার্থ জনমতের প্রতিফলন ঘটে না- পরোক্ষ গণতন্ত্রে যত বেশি সংখ্যক জনপ্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন গণতন্ত্রের ভিত মজবুত হবে। কিন্তু এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় জনপ্রতিনিধির সংখ্যা সীমিত হয়, সেইজন্য যথার্থ জনমতের প্রতিফলন ঘটে না।

5) সংখ্যালঘুদের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়- এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ থাকে না। সংখ্যায় কম বলে এই সকল সম্প্রদায়ের কোন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও নির্বাচনে জিততে পারে না। সেইজন্য এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভাতে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষিত হয় না।

6) বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আইনসভা স্থান পান না- এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সদস্যগণ জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। নির্বাচনে অংশ নিতে হলে কোনো রাজনৈতিক দলের শরণাপন্ন হতে হবে অথবা নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু বর্তমানে দলীয় রাজনীতি এতটাই কলুষতাপূর্ণ যে কোনো জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইবেন না। যার ফলে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিদের স্থান হয় না। কিন্তু দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার উচ্চকক্ষে এইসকল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনায়াসে স্থান দেওয়া যায়।