Header Ads Widget

header ads

Ticker

6/recent/ticker-posts

দ্বাদশ শ্রেণি- বিধানসভার স্পিকারের ভূমিকা

দ্বাদশ শ্রেণি
বিষয়- রাষ্ট্রবিজ্ঞান

ভারতের আইন বিভাগ

প্রশ্ন- পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার অধ্যক্ষের ভূমিকা পর্যালোচনা করো। [8]


উত্তর- সংবিধান অনুসারে, ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলির আইনসভা এককক্ষবিশিষ্ট হতে পারে, আবার দ্বিকক্ষবিশিষ্টও হতে পারে। রাজ্য আইনসভার একটিমাত্র কক্ষ থাকলে তাকে বলা হয় বিধানসভা এবং রাজ্যে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা থাকলে উচ্চকক্ষটিকে বলা হয় বিধান পরিষদ। পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা রয়েছে। এই আইনসভা অর্থাৎ বিধানসভা যিনি পরিচালনা করেন তাকেই বলা হয় স্পিকার বা অধ্যক্ষ। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার বর্তমান অধ্যক্ষের নাম বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।

সংবিধানের 78 নম্বর ধারা অনুসারে, বিধানসভার প্রথম অধিবেশনে নির্বাচিত সদস্যগণ নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে অধ্যক্ষ হিসেবে নির্বাচন করেন। অধ্যক্ষের কার্যকাল সাধারণত পাঁচ বছর তবে তার কার্যকরের মেয়াদ নির্ভর করে বিধানসভার কার্যকালের ওপর। স্পিকারের অনুপস্থিতিতে ডেপুটি স্পিকার সভার কার্য পরিচালনা করেন।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার অধ্যক্ষের ভূমিকা

রাজ্য আইনসভার সভাপতি হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার অধ্যক্ষ এইসব ভূমিকা পালন করে থাকেন- 

1) সভা পরিচালনা করা- বিধানসভার অধ্যক্ষের প্রধান কাজ হল সভা পরিচালনা করা। তিনি সংবিধানসম্মতভাবে সভার কর্মসূচি স্থির করেন এবং সেই অনুযায়ী সভার কার্য পরিচালনা করেন। বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন অধ্যক্ষ সদস্যদের বিতর্ক এবং আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন। সভার রীতি অনুযায়ী, সকল সদস্য অধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে নিজেদের বক্তব্য রাখেন। তাই সভা চলাকালীন তাকেই সবথেকে সক্রিয় থাকতে হয়।

2) সংযোগ রক্ষা- বিধানসভার অধ্যক্ষ সভার ভেতরে এবং বাইরে সংযোগ রক্ষাকারীর ভূমিকা পালন করে থাকেন। সভা চলাকালীন বিরোধীপক্ষ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাইলে অধ্যক্ষের অনুমতি নিয়েই প্রশ্ন উত্থাপন করতে হয় এবং সরকারপক্ষ তার উত্তর দেওয়ার আগেও অধ্যক্ষের অনুমতি নেয়। এইভাবে সভার মধ্যে তিনি সরকার পক্ষ এবং বিরোধী পক্ষের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করেন। আবার তিনি রাজ্যপাল এবং বিধানসভার মধ্যেও সংযোগ রক্ষা করেন। সংবিধান অনুযায়ী, যেহেতু রাজ্যপাল হলেন রাজ্য আইনবিভাগের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, তাই রাজ্যপাল সভা সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানতে চাইলে অধ্যক্ষের মাধ্যমে জেনে থাকেন। আবার, রাজ্যপাল সভার উদ্দেশ্যে কোনো বার্তা বা নির্দেশ প্রেরণ করতে চাইলে অধ্যক্ষের মাধ্যমে তা করে থাকেন। 

3) শৃঙ্খলা রক্ষা- বিধানসভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের জনপ্রতিনিধির সমাবেশ ঘটে। এর ফলে প্রায়শই সদস্যদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয় এবং উত্তেজনার বাতাবরণ তৈরি হয়। অধ্যক্ষের কাজ হল সভার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা। সদস্যগণ যাতে সভার নিয়মবিধি মেনে চলেন সে বিষয়ে অধ্যক্ষকে সদাসতর্ক থাকতে হয়। বিধানসভার নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য অধ্যক্ষের হাতে বেশ কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কোনো সদস্য বক্তব্য রাখার সময় অপ্রাসঙ্গিক বা আপত্তিকর কোনো শব্দ প্রয়োগ করলে অধ্যক্ষ সেই বক্তাকে সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে দিতে পারেন। কোনো সদস্য অশোভনীয় আচরণ করলে অধ্যক্ষ তাকে ভর্ৎসনা করতে পারেন, কক্ষ ত্যাগের নির্দেশ দিতে পারেন, এমনকি তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্তও করতে পারেন।

4) অর্থবিল বিষয়ক- কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয় আইনসভাতেই অর্থবিলের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং বিতর্কিত বিষয়। কোন বিলকে অর্থবিল বলা হবে সে বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই এবং এইজন্য বিতর্কের অবকাশ থেকে যায়। তবে, সংবিধান অনুসারে কোনো বিল অর্থবিল কিনা- এ ব্যাপারে অধ্যক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

5) সদস্যপদ খারিজ করা- বিধানসভার অধ্যক্ষের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা হলো দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুসারে সদস্যপদ খারিজ করা। 1985 সালের 52 তম সংবিধান সংশোধনী আইন অনুযায়ী কোনো সদস্য দলত্যাগ জনিত কারণে বিধায়কের যোগ্যতা হারিয়ে যায় কিনা তা বিচার করার দায়িত্ব অধ্যক্ষকে দেওয়া হয়েছে। তবে, এক্ষেত্রে স্পিকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত নয়, বিষয়টি আদালতে বিচারযোগ্য।

6) কমিটি গঠন- বিধানসভার অধ্যক্ষ বিভিন্ন কমিটির সদস্যদের নিয়োগ করেন এবং কয়েকটি কমিটির সভাপতিদেরও তিনি নিয়োগ করেন।

7) নির্ণায়ক ভোট- বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিধানসভার অধ্যক্ষ সদস্যদের ভোট নিয়ে থাকেন। সাধারণ অবস্থায় অধ্যক্ষ নিজে ভোট দেন না। কিন্তু, কোনো বিষয়ের পক্ষে এবং বিপক্ষে সমান ভোট পড়লে অধ্যক্ষ নির্ণায়ক ভোট দিতে পারেন।

8) সদস্যদের অধিকার রক্ষা করা- বিধানসভার সভাপতি হিসাবে অধ্যক্ষ সভার সদস্যদের বিশেষাধিকার রক্ষা করে থাকেন। যেমন, অধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো সদস্যকে গ্রেফতার করা যায় না।

9) অন্যান্য ভূমিকা- উপরোক্ত কাজগুলি ছাড়াও বিধানসভার অধ্যক্ষ যেসব ভূমিকা পালন করেন সেগুলি হল- তিনি সদস্যদের পদত্যাগপত্র জমা নেন, অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে সভা পরিচালনা করবেন এমন ছয় সদস্যের তালিকা প্রস্তুত করেন ইত্যাদি।

উপরের আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় অধ্যক্ষের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সুষ্ঠুভাবে সভার কাজ পরিচালনা করা থেকে শুরু করে সভার গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি বজায় রাখা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই অধ্যক্ষের বিশেষ অবদান থাকে। তিনি রাজ্য আইনসভার সভাপতি। সভার মধ্যে সব থেকে উঁচুতে তার অবস্থান। বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্য হয়েও অধ্যক্ষকে দলমত নির্বিশেষ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হয়। বিধানসভার অধ্যক্ষ পক্ষপাতদুষ্ট হলে সভার গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি নষ্ট হতে বাধ্য।