Header Ads Widget

header ads

Ticker

6/recent/ticker-posts

দ্বাদশ শ্রেণি- লোকসভা ও রাজ্যসভার সম্পর্ক

দ্বাদশ শ্রেণি

বিষয়- রাষ্ট্রবিজ্ঞান

অধ্যায়- ভারতের আইনবিভাগ

প্রশ্ন- ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সম্পর্ক আলোচনা করো। [8] অথবা,

প্রশ্ন- লোকসভা এবং রাজ্যসভার পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করো। [8]


উত্তর- সংবিধান অনুযায়ী ভারতে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা সংসদ বা পার্লামেন্ট হল একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা। এর উচ্চকক্ষের নাম রাজ্যসভা এবং নিম্নকক্ষের নাম লোকসভা। ভারতের কেন্দ্রীয় আইন বিভাগের প্রধান অঙ্গ তিনটি- লোকসভা, রাজ্যসভা এবং রাষ্ট্রপতি। যেকোনো বিলকে আইনে পরিণত করতে হলে রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রয়োজন। এজন্য রাষ্ট্রপতিকে ভারতের পার্লামেন্টের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে গণ্য করা হয়। যাইহোক, লোকসভা এবং রাজ্যসভার পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে আইন প্রণয়নের মহৎ কার্য সম্পাদিত হয়।


উভয় কক্ষের সম্পর্ক- পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সম্পর্ক বলতে লোকসভা এবং রাজ্যসভার ক্ষমতাগত সম্পর্ককে বোঝায়। কিছু ক্ষেত্রে উভয় কক্ষ সমান ক্ষমতা ভোগ করে, কিছু ক্ষেত্রে রাজ্যসভার ক্ষমতা বেশি এবং কিছু ক্ষেত্রে লোকসভার ক্ষমতা বেশি। নীচে উভয় কক্ষের ক্ষমতাগত সম্পর্ক আলোচনা করা হল।


1] যেসব ক্ষেত্রে উভয় কক্ষের ক্ষমতা সমান

ক) অর্থবিল ছাড়া অন্য যেকোনো বিল উত্থাপন বা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে উভয় কক্ষ সমান ক্ষমতা ভোগ করে।

খ) রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন এবং অপসারণের ব্যাপারে উভয় কক্ষের সমান ক্ষমতা রয়েছে।

গ) সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও লোকসভা এবং রাজ্যসভা সমান ক্ষমতার অধিকারী। যেকোনো কক্ষ সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে এবং উভয় কক্ষের সম্মতি ছাড়া সংবিধান সংশোধন করা যায় না।

ঘ) রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলে সেই ঘোষনাটিকে উভয় কক্ষের অনুমোদন লাভ করতে হয়।

ঙ) পার্লামেন্টের উভয় কক্ষই আইনসভার অবমাননা কিংবা অধিকারভঙ্গের অভিযোগে পার্লামেন্টের সদস্য অথবা সদস্য নন এমন ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে পারে।

চ) কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নতুন হাইকোর্ট স্থাপন করার ক্ষেত্রে অথবা, কোনো অধস্তন আদালতকে হাইকোর্টে উন্নীত করার ক্ষেত্রে উভয় কক্ষের সমান ভূমিকা রয়েছে।


2] যেসব ক্ষেত্রে রাজ্যসভা ক্ষমতা বেশি

ক) রাজ্যসভা একটি স্থায়ী কক্ষ। লোকসভার মেয়াদ পাঁচ বছর এবং তার আগেও রাষ্ট্রপতি লোকসভা ভেঙে দিতে পারেন। রাজ্যসভার সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ ছয় বছর এবং প্রতি দু'বছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর গ্রহণ করেন। অর্থাৎ, রাজ্যসভা কখনোই সদস্যশূন্য হয় না।

খ) রাজ্যসভায় উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশ যদি এই মর্মে কোন প্রস্তাব গ্রহণ করে যে, জাতীয় স্বার্থে নতুন সর্বভারতীয় চাকরি সৃষ্টি করা উচিত তাহলে পার্লামেন্ট সেই অনুসারে আইন প্রণয়ন করতে পারে। লোকসভায় এরূপ কোনো প্রস্তাব উত্থাপন করা যায় না।

গ) রাজ্যসভায় উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশ যদি এই মর্মে কোন প্রস্তাব গ্রহণ করে যে, জাতীয় স্বার্থে রাজ্য তালিকাভুক্ত কোন বিষয়ে পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন করা উচিত, তাহলে পার্লামেন্ট সেই অনুসারে আইন প্রণয়ন করতে পারে। 

ঘ) পদাধিকারবলে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি রাজ্যসভার সভাপতিত্ব করেন। ভারতের শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির পরেই উপরাষ্ট্রপতির স্থান। সুতরাং তার উপস্থিতিতে রাজ্যসভার মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ঙ) রাজ্যসভা এককভাবে উপরাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করার প্রস্তাব আনতে পারে।


3] যেসব ক্ষেত্রে লোকসভার ক্ষমতা বেশি

ক) একমাত্র লোকসভাই সরকার গঠন করতে পারে। লোকসভা নির্বাচনে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সেই দল সরকার গঠন করে এবং সেই দলের নেতা বা নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করা হয়।

খ) মন্ত্রিপরিষদ কেবলমাত্র লোকসভার কাছে যৌথভাবে দায়িত্বশীল থাকে। অন্যভাবে বললে, লোকসভা মন্ত্রিপরিষদকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

গ) অর্থবিল কেবলমাত্র লোকসভাতেই পাস হয়। রাজ্যসভা কোনো অর্থবিলকে সংশোধন বা বাতিল করতে পারে না এবং 14 দিনের বেশি আটকে রাখতে পারে না।

ঘ) কোনো বিল অর্থবিল কিনা, এই নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে লোকসভার স্পিকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

ঙ) সাধারণ বিলের ক্ষেত্রেও লোকসভা বেশি ক্ষমতা ভোগ করে। কোনো বিল নিয়ে লোকসভা এবং রাজ্যসভার মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হলে রাষ্ট্রপতি যৌথ অধিবেশন আহ্বান করেন। যেহেতু লোকসভার সদস্যসংখ্যা বেশি এবং লোকসভার স্পিকার যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন, তাই লোকসভার সিদ্ধান্তই বজায় থাকে।


পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রে, যেখানে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা রয়েছে সেখানে নিম্নকক্ষই বেশি ক্ষমতা ভোগ করে এবং অধিক শক্তিশালী হয়। নিম্নকক্ষের সদস্যরা যেহেতু জনগণ দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হয় তাই এই কক্ষের ক্ষমতা বেশি হাওয়াই কাম্য। ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভার নিম্নকক্ষ, অর্থাৎ লোকসভার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আসলে লোকসভার সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়, বরং গঠনমুলক সমালোচনার মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিতকে মজবুত করাই হল রাজ্যসভার আসল উদ্দেশ্য।