Header Ads Widget

header ads

Ticker

6/recent/ticker-posts

দ্বাদশ শ্রেণি- ঐতিহাসিক বস্তুবাদ

Historical Materialism

ঐতিহাসিক বস্তুবাদ


রাষ্ট্রবিজ্ঞান (দ্বাদশ শ্রেণি)
অধ্যায়- কয়েকটি প্রধান রাজনৈতিক মতাদর্শ


[West Bengal Council of Higher Secondary Examination (WBCHSE) Class 12 Political Science Questions and Answers in Bengali; Chapter- Some Major Political Doctrines; Question- Historical Materialism Theory of Karl Marx.]


প্রশ্ন- কার্ল মার্কস-এর ঐতিহাসিক বস্তুবাদ তত্ত্বটি আলোচনা করা৷ [৪ ]


উত্তর- মার্কসবাদী রাষ্ট্রচিন্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ঐতিহাসিক বস্তুবাদ বা ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা (Materialist Conception of History)। মানবসমাজ এবং এর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিকাশের ইতিহাসে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের প্রয়োগকেই বলা হয় ঐতিহাসিক বস্তুবাদ। অর্থাৎ, দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ একটি নীতি এবং ঐতিহাসিক বস্তুবাদ হল তার প্রায়োগিক দিক।


ঐতিহাসিক বস্তুবাদ: মূল বক্তব্য 


ঐতিহাসিক বস্তুবাদ সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থার সাপেক্ষে সামাজিক বিকাশের ইতিহাস আলোচনা করে। উৎপাদন ব্যবস্থা ধারণাটি অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। উৎপাদন বলতে সামাজিক উৎপাদনকে বোঝায়। উৎপাদনের উপাদানের সঙ্গে শ্রমশক্তি যোগ করে সামাজিক উৎপাদন সাধিত হয়। মানবসমাজের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তন হলে মানবসমাজের মৌলিক পরিবর্তন ঘটে থাকে। মার্কসবাদীদের মতে, অর্থনীতি হল সমাজের মূল ভিত এবং অন্যান্য সামাজিক বিষয়গুলি (যেমন- আইন, কলা, ধর্ম, সাহিত্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি) এই ভিতের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। 


উৎপাদন ব্যবস্থা ও সামাজিক পরিবর্তন


বেঁচে থাকার জন্য মানুষের প্রয়োজন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি। মানুষের প্রয়োজনীয় প্রতিটি দ্রব্যের প্রাথমিক উপাদান প্রকৃতি থেকেই পাওয়া যায়। সেই উপাদানের সঙ্গে মানুষের শ্রমশক্তি যোগ করে মানুষ কাঙ্খিত দ্রব্য উৎপাদন করে। তাহলে উৎপাদনের উপাদান দুটি- 1) প্রাকৃতিক এবং 2) শ্রমশক্তি।


এবার সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার কথা বলা যাক। উৎপাদন ব্যবস্থার দুটি দিক- 1) উৎপাদন শক্তি এবং 2) উৎপাদন সম্পর্ক। উৎপাদন শক্তি হল উৎপাদনের উপাদানগুলি, অর্থাৎ 1) প্রাকৃতিক শক্তি এবং 2) মানুষের শ্রমশক্তি। আর, উৎপাদন সম্পর্ক হল উৎপাদন ব্যাবস্থার সঙ্গে জড়িত মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক। একজন শ্রমিকের সঙ্গে আরেকজন শ্রমিকের সম্পর্ক, শ্রমিকশ্রেণির সঙ্গে মালিকশ্রেণির সম্পর্ক ইত্যাদি হল উৎপাদন সম্পর্কের অন্তর্গত।


মার্কসবাদীদের মতে, উৎপাদন শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় থাকলে সুষ্ঠুভাবে উৎপাদন চলতে থাকে। কিন্তু সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উৎপাদন শক্তির পরিবর্তন ঘটলে উৎপাদন সম্পর্কেও পরিবর্তন আসে এবং তখনই সামাজিক পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। সহজভাবে বললে, উৎপাদন শক্তির সঙ্গে উৎপাদন সম্পর্কের দ্বন্দ্ব উপস্থিত হলে সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে। 


ঐতিহাসিক বস্তুবাদের আলোকে সামাজিক বিকাশ


উৎপাদন ব্যবস্থা একটি গতিশীল ব্যাপার। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন শক্তির যে পরিবর্তন ঘটে তার ফলেই উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তন সাধিত হয়। উৎপাদন শক্তির এই পরিবর্তনটা স্বতঃস্ফূর্ত। অর্থাৎ, পুরাতন ব্যবস্থার মধ্যে থেকেই উৎপাদন শক্তি উন্নততর হয়। তখন উৎপাদন সম্পর্কের সঙ্গে উৎপাদন শক্তির বিরোধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। এর ফলস্বরূপ উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে। আর উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তন মানেই সামাজিক পরিবর্তন।


ঐতিহাসিক বস্তুবাদ অনুসারে, সমাজ বিকাশের প্রথম স্তর হল আদিম সাম্যবাদী সমাজ। এই সমাজে কোনোরকম শ্রেণিবিভাজন ছিল না। কিন্তু কালক্রমে উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে এবং জন্ম নেয় দাস সমাজ। দাস সমাজেই প্রথম শ্রেণিবৈষম্য দেখা দেয়। এইভাবে বিভিন্ন সময়ে উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তনের ফলে ক্রমে দাস সমাজ থেকে সামন্ত সমাজ এবং তারপরে আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজের জন্ম হয়েছে। 


মার্কসবাদীদের মতে, পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার পরের স্তর হল সমাজতন্ত্র। সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং উৎপাদন ব্যবস্থায় সকলেই শ্রমদান করবে। ফলে উৎপাদন ব্যবস্থায় আর কোনো পরিবর্তন আসবে না। ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা অনুসারে, সমাজ বিকাশের চূড়ান্ত রূপটি হল সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা।


পরিশেষে বলা যায়, কার্ল মার্ক্স ঐতিহাসিক বস্তুবাদ তত্ত্বের মাধ্যমে ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা প্রদান করে সমাজেতিহাসের বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ করেছেন এবং ইতিহাসকে বিজ্ঞানের পর্যায়ে উন্নীত করেছেন।